শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ছয়জনকে বুধবার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে কারাগারের ‘কনডেম সেল’ এ রাখা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাগারের যে বিশেষ সেলে রাখা হয় সেটিকেই কনডেমড সেল বলা হয়।
কারাগারে থাকা অন্যান্য বন্দিদের তুলনায় কনডেম সেলের বন্দিদের জন্য ভিন্ন আচরণবিধি রয়েছে। অন্যান্য বন্দিদের থাকার জায়গার সাথেও কনডেমড সেলের বেশ পার্থক্য রয়েছে।
কনডেম সেলের সাথে কারাগারের অন্যান্য সেলের পার্থক্য কী? কোনো কারাগারে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের অন্যান্য অপরাধীদের চেয়ে আলাদা ধরণের কক্ষে রাখা হলেও বাংলাদেশের জেল কোড বা কারাবিধি মোতাবেক সেরকম কোনো আইন নেই বলে জানান সাবেক কারা উপ-মহাপরিদর্শক শামসুল হায়দার সিদ্দিকী।
কারণ কারাবিধি অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর একজন বন্দীকে কারাগারে সার্বক্ষণিক পাহারায় রাখা, দর্শনার্থীদের সাথে দেখা করার বিষয়ে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হলেও আলাদা কক্ষে রাখার বিষয়টি আইনে নির্দিষ্ট করে উল্লেখিত নেই।
তবে শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ সাধারণ অপরাধীদের চেয়ে কনডেম সেলের আসামিদের একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জেল কোড বা কারাবিধিতে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে রাখার মত কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকলেও তাদের আলাদা ধরনের কক্ষে রাখা হয়ে থাকে। এটিকে এক ধরনের রেওয়াজ বলা যেতে পারে। একটি কনডেম সেলে সাধারণত একজন বা তিনজন বন্দী রাখা হয়।
শামসুল হায়দার বলেন, সাধারণত ধারণা করা হয় যে দুইজন বন্দী থাকলে গোপনে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারে, তবে তিনজন থাকলে পরিকল্পনা আর গোপন থাকে না। ওই ধারণা থেকেই দুইজন বন্দী একটি কনডেম সেলে রাখা হয় না।
তিনি জানান, কারাবিধি অনুযায়ী, একজন বন্দীর থাকার জন্য ন্যুনতম ৩৬ বর্গফুট (৬ফিট বাই ৬ ফিট) জায়গা বরাদ্দ থাকতে হবে। তবে বাংলাদেশের জেলগুলোতে কনডেম সেলের ক্ষেত্রে এই আয়তন কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। একজন বন্দী থাকার কনডেমড সেল সাধারণত ১০ ফুট বাই ৬ ফুট আয়তনের হয়ে থাকলেও বাংলাদেশের অনেক জেলেই সেলের মাপ কিছুটা বড় হয়ে থাকে। আর তিনজন বন্দী যেসব সেলে রাখা হয় সেগুলোর আয়তন আরো বড় হয়ে থাকে।
কনডেম সেলের ভেতরে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য সাধারণত অন্যান্য সেলের তুলনায় অনেক ছোট আকারের জানালা থাকে। আর এসব সেলে থাকা বন্দীদের দিনে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেলের বাইরে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়।
শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, একসময় কনডেম সেলের বন্দীদের নিজেদের সেলের বাইরে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল না। সেল থেকে বছরের পর বছর বের হননি, এমন উদাহরণও আছে। কিন্তু একটা ছোট ঘরের ভেতরে দীর্ঘ সময় থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে, তাই বর্তমানে সব বন্দিদেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বাইরে চলাফেরা করতে দেয়া হয়। কনডেম সেলে থাকা বন্দীরা মাসে একদিন দর্শনার্থীদের সাথে দেখা করার সুযোগ পান।
আগে একসময় জেলের ভেতরেই কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের সাথে দেখা করতে আসতে পারতো দর্শনার্থীরা। তবে এখন মাসে একদিন জেল গেটে তারা দর্শনার্থীদের সাথে দেখা করার সুযোগ পান।
একজন বন্দি একবারে সর্বোচ্চ ৫ জন দর্শনার্থীর সাথে দেখা করতে পারেন। কারা কর্তৃপক্ষ সাধারণত কনডেম সেলের প্রত্যেক বন্দির কাছ থেকে তার নিকটাত্মীয়দের তালিকা নেন, নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাড়া কনডেমসেলের বন্দির সাথে দেখা করতে অনুমতি দেয় না কারা কর্তৃপক্ষ।
শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, সাধারণত মাসে একদিন বন্দিদের সাথে দর্শনার্থীদের দেখা করার অনুমতি দেয়া হলেও বিশেষ বিবেচনায় কখনো কখনো ১৫ দিনের মধ্যেও কনডেম সেলের আসামির সাথে দর্শনার্থীদের দেখা করতে দেয়া হয়। সূত্র: বিবিসি
Leave a Reply